ডেস্ক রিপোর্ট : কবরের সামনে দাড়িয়ে মোনাজাতরত অবস্থায় দাড়িয়ে, আর সে ছবিটি যদি বন্ধুরা না দেখতে পারে বড় মিস হয়ে যাবে তাই হয়তো ঐ মেয়েটি মোনাজত করা অবস্থায় তুলে ফেলে সেলফি এরপর যা করার তাই ফেসবুকে পোষ্ট। কদিন দিন আগে এক ছেলে নিজের বাবার লাশ কাঁধে নিয়ে কবরের দিকে যাচ্ছে। সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে। ক্যাপশন- “আমি এবং আমার কাঁধে বাবার লাশ, কবরের দিকে যাচ্ছি। সবাই দোয়া করবেন” । এক মেয়ে রিক্সায় বসে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে। ক্যাপশনে ফটো ক্রেডিট হিসেবে লিখেছে- “প্রতিবন্ধী”! তবে মেয়েটির ছবি দেখে মনে হলো সে নিজেই এক বড় প্রতিবন্ধী। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকানো ঠোটটা গালের ভেতর এমন অঙ্গভঙ্গি দেখলে যেকেউ বলবে প্রতিবন্ধী। সেখানে কেউ একজন ছবিতে কমেন্ট দিয়েছে তাতে লেখা- এতদিন জানতাম “প্রতিবন্ধী স্টাইল” ফটোশুট হয়, কিন্তু ফটোগ্রাফার “প্রতিবন্ধী” হয় এই প্রথম শুনলাম।
আবার কদিন আগে এক ছবির দেখা মিললো ফেসবুকে সেখানে দেখা যায় এক বন্ধুর মৃত্যুর পর তার কজন বন্ধু কবর খুড়ছে সেখানেও সেলফি, তবে সেলফির দৃশ্য দেখে মনে হলো এটা কোন কবর খোড়ার ছবি নাকি পিকনিকের জন্য চুলা খোরার ছবি বোঝা মুশকিল! সবার মুখে হাসি যেন আনন্দ উল্লাসে মেতে আছে সবাই।
মনে আছে?? রমজানের সময় তারাবীহর নামাজে সেজদারত এক মেয়ের সেলফির কথা? কতটা অসুস্থ হলে এমন কাজ করা যায়!
আবার এটাও দেখা গেছে এক ছেলে তার মায়ের জন্য খোড়া কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে!হায় ঈশ্বর!! কদিন আগের ঘটনা এক ছেলে তার মৃত দাদার লাশের সাথে সেলফি তুলেছে! ক্যাপশন- ‘গুড বাই দাদু’ !
আরেক মেয়ে রেডিসনে খেতে গিয়ে খাবার সামনে রেখে সেলফি আপলোড দিয়েছে। ক্যাপশন- “ইয়ো ইয়ো….এত্তগুলা ইয়াম্মি”! ক্যাপশন যেমনি ছিলো, সবগুলোর মুখের ভঙ্গিমা দেখে মনে হয়েছিলো ওটা রেস্টুরেন্ট নয়, কোন এক প্রতিবন্ধী হাসপাতাল ছিলো।
আরেক ছেলে ক্লাসে বসে ছবি আপলোড করেছে। ক্যাপশন – “ম্যাডাম কিন্তু হেব্বি” ফটোক্রেডিট- “বলদ”! রামপুরা ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে আরেক গ্রুপ সেলফি আপলোড দিয়েছে। ক্যাপশন- “উই অল গাইজ আর রকজ, মালের ভ্যাট শকজ্”!
হজ্ব করতে গিয়ে কাবা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে আপলোড দিয়েছে এক ব্যাক্তি।
ক্যাপশন- “it’s imagine, I’m LOL”
এই যখন আমাদের সেলফি প্রেমী আর বাপের টাকায় DSLR কিনে রাতারাতি বনে যাওয়া ডিজিটাল ফটোগ্রাফারদের ছবি ও ছবির ক্যাপশন, তখন মনে পড়ে যাচ্ছে কেভিন কার্টারের কথা।
১৯৯৪ তে কেভিন সুদানে একটি ছোট্টো বাচ্চার ছবি তুলেছিলেন। কংকাল প্রায় বাচ্চাটি হামাগুড়ি দিয়ে এগুচ্ছিল খাবারের জন্য। পাশেই একটি শকুন অপেক্ষা করছিলো বাচ্ছাটি মারা যাবার জন্য। কেভিন ওই বাচ্ছাটিকে খাবার পেতে সহায়তা না করার যন্ত্রনায় আত্মহত্যা করেছিলো। অথবা, কয়েকদিন আগেই সাগর পাড়ের আইলানের ছবি তোলা সাধারন ফটোগ্রাফারের কথাই ধরুন। যেই ছবিটি
সারা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিলো। চাইলেই আমরাও আমাদের ক্যামেরার ল্যান্স কাজে লাগিয়ে আমাদের সমাজের অনেক অসংগতি তুলে ধরতে পারি সারা বিশ্বের কাছে।
অথছ আমরা ছবি তুলি মানসিক প্রতিবন্ধীর মত আর ক্যাপশন দেই উন্মাদের মত। আমাদের বিকৃত মস্তিষ্কও যে দিন দিন বিকৃত হয়ে যাচ্ছে এগুলোই তার প্রমান।
নিরাপদনিউজ
পাঠকের মতামত